আমাদের দেশে বেশিরভাগ স্থাপনা কংক্রিট দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। এই কংক্রিটের সাথে আমরা রড ব্যবহার করে থাকি এজন্য একে RCC স্ট্রাকচার বলে থাকি। আর কংক্রিট এর বিভিন্ন উপাদান যেমনঃ ব্রিক,স্টোন,স্যান্ড,সিমেন্ট,পানি সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে এই রডে মরিচাজনিত সমস্যা হতে পারে এছাড়া রিনফোর্সমেন্ট ও সঠিক গ্রেডের ব্যাভার না করলে ভবন অন্যান্য সমস্যা সহ মরিচা জনিত ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
মরিচা কেন হয় ?
ব্যবহৃত রড বাইরের বাতাসের সংস্পর্শে এলে বাতাসের অক্সিজেনের সাথে লোহার বিক্রিয়ায় এক ধরণের যৌগ আয়রণ অক্সাইড সৃষ্টি হয়। এই আয়রণ অক্সাইডই বাংলায় মরিচা নামে অভিহিত। অর্থাৎ কংক্রিটের মধ্যে রড কোনভাবে পানি এবং অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসলে মরিচা হতে পারে। এই মরিচার কারণে লোহা ফুলে যায় বা আয়তনে স্ফীত হয় যার ফলে কংক্রিটে ফাটল ধরে বা ঢালাই খসে পড়ে ভবনের স্থায়িত্ব কমিয়ে দেয়।
ভবন নির্মানের আগে মরিচা রোধে করনীয়
নির্মানের আগে- ভবনে ব্যবহৃত রডে যেন মরিচা না লাগে সেজন্যে আমরা ভবনের প্রত্যেকটি মেম্বার যেমন কলাম, বীম, স্লাবে নূন্যতম ক্লিয়ার কভার ব্যবহার করে থাকি। ক্লিয়ার কভার হচ্ছে রডের টাই থেকে কংক্রিটের যতটুকু অংশ থাকে সেটিকে বলা হয়ে থাকে। একজন স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার যথাযথভাবে এই ক্লিয়ার কভার ড্রয়িং উল্লেখ করে দেয় এবং সেই নুন্যতম ক্লিয়ার কভার অবশ্যি বয়াবহার করতে হবে।
- এরপর অবশ্যই ভালো মানের কংক্রিট ব্যবহার করতে হবে এবং ভালো মানের কংক্রিটের জন্য উন্নত সিমেন্ট ও রড ব্যবহার করতে হবে।
- ঢালাইয়ের সময় কংক্রিটে সিমেন্ট দ্বারা যে হাইড্রেশন বিক্রিয়া হয়, সেটির ফলে রডের চারপাশে একটি প্যাসিভ লেয়ার তৈরি করে যা রডকে মরিচার হাত থেকে রক্ষা করে।
- রড ভাল স্ট্রেন্থের হতে হবে এবং ক্রোমিয়ামের মাত্রা ঠিক থাকতে হবে।
- যে এ্যাগ্রেগেট বা স্টোন চিপ্স ব্যবহার করা হবে, তা ভাল গ্রেডের ও আকৃতির হতে হবে।
- কংক্রিটে বেশি পানি ব্যবহার করা যাবে না। কারণ অতিরিক্ত পানি ক্যাপিলারি চ্যানেল তৈরি করে ক্ষতিকর উপাদানগুলোকে অতি দ্রুত কংক্রিটের ভিতর প্রবেশ করিয়ে এর শক্তিমাত্রা কমিয়ে দিতে পারে যা ভিতরের রডে মরিচা পড়তে সহায়তা করে।
- অন্যদিকে পানি কমিয়ে দিলে কংক্রিটের নমনীয়তাও কমে যায় যা এ্যাডমিক্সার ব্যবহার করে দূর করতে হবে।
- তাপমাত্রাও মরিচা হওয়ার একটি অন্যতম কারণ। এজন্যে খুব গরম আবহাওয়ায় কংক্রিট তৈরি না করাই ভাল অথবা তাপমাত্রা কমানোর জন্যে এ্যাডমিক্সার ব্যবহার করতে হবে।
- এছাড়া বিভিন্ন যৌগের আক্রমণে ভবনে মরিচা দেখা যেতে পারে।
ক্লোরাইড আক্রমণঃ
- সিমেন্ট, পানি, এ্যাগ্রিগেট, এ্যাডমিক্সার থেকে ক্লোরাইড আক্রমণ হতে পারে যা রডে মরিচা ধরায়। এজন্য কোন সিমেন্ট, এ্যাগ্রিগেট, এ্যাডমিক্সার ব্যবহার করলে ভালো হবে তা একজন কংক্রিট বিশেষজ্ঞের কাছে জেনে নেওয়া ভালো।
- তবে আমরা পানির বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দেইনা। সাইটে কাজ শুরু করার আগে কংক্রিটে ব্যবহৃত পানিতে ক্লোরাইডের মাত্রা কত তা দেখে নিতে হবে। সাধারণভাবে পানের যোগ্য যে কোন পানি ব্যবহার করা উত্তম।
কারবোনেশনঃ
- বাতাসের কার্বন ডাই অক্সাইড বা পানি মিশ্রিত কার্বন ডাই অক্সাইড রডের সংস্পর্শে আসলে কংক্রিটের তৈরি প্যাসিভ লেয়ার নষ্ট করে ফেলে যা রডে মরিচার জন্য উপযোগী। এটি কংক্রিটের গুণগত মানও কমিয়ে দেয়। ফেনোলফথালিন দিয়ে কারবোনেশনের মাত্রা কতটুকু তা জানা যায়।
সালফেট আক্রমণঃ
- এই সালফেট আক্রমণ সাধারণত মাটিতে হয়ে থাকে। এর ফলেও মরিচা লেগে থাকে। ফলে মাটির উপরে যে সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেই সিমেন্ট মাটির নীচে কোনভাবেই ব্যবহার করা যাবে না।
0 Comments